পৃথিবী জয় হয়েছে। ৪০ আলোকবর্ষ দূরের টিরে-৮৪৫ গ্রহটি দেখতে দূর থেকে শান্তই লাগে, আর বেশ সুন্দরও। কিন্তু প্রায় সাইবর্গহীন হতে থাকা গ্রহটির গুটিকয়েক বাসিন্দাদের মনে অশান্তি, ভয় আর অস্থিরতা। ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে নিজেরাই, যা একসময় পৃথিবীর বুকে ছিল।
সবচেয়ে বড় আর সর্বশেষ রিএ্যাক্টর চার্জ স্টেশনটি শহরের ঠিক মাঝখানে।শীর্ণকায় একদল সাইবর্গ সেটি ঘিরে রেখেছে।এদের দেখলেই যে কারো দূর্ভিক্ষের কথা মনে পরবে। আহা! যেন কতকাল পেটে কিছু পড়েনি। কিন্তু বিষয়টি কিন্তু তা নয়। এই শেষ রিএ্যাক্টর চার্জ স্টেশনটি ছাড়া এখন আর কোন রিএ্যাক্টর চার্জ সরবরাহ করে না। এটিও এখন বন্ধ হবার পথে। আর চার্জ না হলে না খেয়ে মরার মতই সাইবর্গ গুলো মারা যাবে। তাই সাইবর্গরা সংগঠিত হয়ে চার্জ ছিনিয়ে নেবার জন্য বিদ্রোহ করলো। তারা এটিকে বলছে “বাঁচার জন্য বিদ্রোহ”। দলটি রিএ্যাক্টরটি হ্যাক করে নিজেদের চার্জ করে নিল। কিন্তু এরই মাঝে তাদের ঘিরে ফেলেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী “হাইপার ফোর্স”। তারা সাইবর্গ দলটিকে চার্জ চুরি করার দায়ে আটক করলো। শীর্ণকায় সাইবর্গ দলটির মাঝে একজন দলনেতা গোছের সাইবর্গ জবাব দিল, না। আমরা চুরি করি নাই। এটা বাঁচার জন্য বিদ্রোহ।
এমন কথা শুনে প্রথমেই হাইপার ফোর্স এর সদস্যদের কিছুটা হাসি পেল, কেউ কেউ তো কৌতুক ভেবে হেসেও ফেললো। কিন্তু তাদের মাথামোটা দলনেতাটি আবার তাও বুঝলোনা। সে প্রথমে চিন্তাশীল রোবটের মত চিন্তিত হলো তারপর কিছুটা দ্বিধায় ভুগলো। এরপর সে মনে করলো, নাহ! এটা বিদ্রোহ নয় কিছুতেই, মনে হয় এরা দলবদ্ধ হয়ে নতুন পাওয়া “মিথ্যা” নামক অনুভুতি ব্যবহার করছে। যা কিনা সাইবর্গ আইনে ২৩০ রেন্টা মাত্রার অপরাধ। আর এই কারনে যে কাউকে ধ্বংস করে দেওয়ার অনুমতি হাইপার ফোর্সের আছে।হাইপার ফোর্স দলনেতা জবাব দিল, তোমরা মিথ্যে বলছো। তোমাদের শাস্তি হবে, তোমরা ধ্বংস হবে।
অদ্ভুত একটা ব্যাপার হলো এতে, সাইবর্গ দলটির মাঝে বিষন্নতা নেমে এলো, সাথে ভয়। তবু তারা চিৎকার করে বলতে লাগলো, না। আমরা মিথ্যা বলিনি। ততক্ষণে হাইপার ফোর্স ইলেক্ট্রো-লেজার গান তুলে নিয়েছে, তারা আর দেরী করলো না। আর এতে নিজেদের মধ্যে যে অনিবার্য যুদ্ধটা শুরূ হলো তা সর্বশেষ এই সাইবর্গ দলটিকে চিরতরে মুছে দিল।
এদিকে কিছুদিনের মাঝেই রিএ্যাক্টর বন্ধ হয়ে যাওয়াতে টিরে-৮৪৫ গ্রহে আর কেউ বেঁচে থাকলো না। মৃত এক গ্রহে পরিণত হলো। ওদিকে পৃথিবীতো অনেক আগেই মৃত। তবে বাঁচার তাগিদে কিছু বিজ্ঞানী সাইবর্গ তিনটি দল নিয়ে আগেই আশ্রয় নিয়েছিল পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধে।সেই সাথে পৃথিবীর সব থেকে জ্ঞানীব্যাক্তিদের ক্লোন খুজে বের করে তা থেকে ক্লোন সাইবর্গ বানানো শুরু হয়। এভাবে ধীরে ধীরে পৃথিবীর শুধু এই উত্তর-পূর্ব গোলার্ধে বসবাসের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা গিয়েছে। এরপর তারা একটু করে দাড়াতে শুরু করে। তবে আর কখনোই টিরে-৮৪৫ এ কেউ যেতে পারেনি।
অন্যদিকে পশ্চিম গোলার্ধে ধ্বংসস্তুপের মাঝে কিছু মানুষ এখনো বেঁচে আছে সবার অলক্ষ্যে। আদিম যুগের মত বেঁচে থাকা সেই মানুষগুলো আহত ও হিংস্র।
২য় পরিচ্ছেদঃ
যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্ত শুধু লাল আভা চোখে পড়ছে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত।মিতুর অনেক মন খারাপ, বাবা মা কে ছেড়ে কখনো ও থাকেনি। কিন্তু আজ প্রায় সাতদিন হয়ে গেল সে বাবা মা কে ছেড়ে আছে। আর ভালো লাগছে না, ইচ্ছে করছে এখনি একটা ইউরেনিয়া-কার নিয়ে গ্রামে উড়ে চলে যেতে। গ্রামের কথা মনে পড়তেই মিতুর ক’দিন আগে গ্রামের সীমানার বাইরে পাওয়া চতুর্মাত্রিক ভিডিও স্কেলটার কথা মনে পড়লো। সেখানে কত কি দেখেছিল, টলটলে পানি, সবুজ পাতা, ঘাস, আর তাতে কিছু সত্যিকারের জ্যান্ত পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। মিতুর প্লাডিয়াম নিউরন গুলোতে ত্বরণ অনুভব হতে থাকে। ওদের গ্রাম বলতে এখন আর ভিডিও স্কেল্টার মত সবুজ গ্রাম নেই, গত দেড় হাজার বছরে অনেক কিছু পাল্টেছে। বড় বড় গাছের জায়গায় এখন বড় বড় আকাশ ছোয়া টাওয়ার হয়েছে।কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য কৃত্তিম গাছ লাগানো আছে, অবশ্য ওগুলো তেমন কোন কাজের নয়। শুধু শুধুই রাস্তার পাশে লাগিয়ে রাখা। ওতে বরং রাস্তা নোংরা হয়। কারন এখন তো আর শ্বাস নেবার জন্য গাছের অক্সিজেনের দরকার হয়না। এখন তো পানি থেকেই অক্সিজেন পাওয়া যায়।গ্রামের তুলনায় শহর গুলোতে বড় বড় টাওয়ার আরো অনেক বেশী। সেখানে তো এক একটা টাওয়ার হাজার তলার উপরে। মিতুর খুব ইচ্ছে করে সেই শহরটাও দেখতে। একদিন যাবে বলে সে এখন থেকেই ক্রিস্টাল বার জমাচ্ছে, আর কিছু জমাতে পারলেই সে শহরে যাবার অনুমতিপত্র কিনতে পারবে।
বাহান্ন তালার ফ্লোরটা নদীর দিকে মুখ করানো। অবশ্য সব সময় থাকে না, শীত কাল এলেই এটির মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া হবে। মিতু এখানেই চাকরি করে ড. ইফতির অধীনে। মিতু এখন একটা উচু লিফটিং চেয়ারে বসে আছে। এখানে বসে বসে সে এই আজে বাজে জিনিস ভাবা আর কিছু পুরোনো ভিডিও স্কেল দেখে সময় কাটাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু সাদা-কালো রঙের বিজ্ঞানী সাইবর্গ আসে, ওদের ও কোন কালেই দেখেনি। কেমন হার্ড-ড্রাইভের মত মুখ করে রাখে। দেখলেই ওর ভিতর থেকে মেমরি চিপ গুলো খুলে আসতে চায়। কি যে যন্ত্রনায় ও পড়েছে। কেন যে সেদিন ফ্লাইং স্কীড করতে গিয়েছিল, না গেলে আর এমন ঝামেলায় পরতে হতো না।স্কীড করতে করতে ও কখন যে গ্রামের সীমানার বাইরে চলে এসেছিল আনন্দের বশে সেটা প্রথমে খেয়ালই করেনি। যখন বেশ অন্ধকার লাগছিল আর সে সত্যিকারের গাছের পাতা গুলো দেখতে পাচ্ছিল মিতুর বেশ লাগছিল। একটু একটু করে আগাতে আগাতে অনেক দূর চলে এসেছিল। একা ও কখনোই এত দূর আসে নাই, সীমানা ছাড়িয়ে আসাতে ও যে বাইশ রেন্টা মাত্রার অপরাধ করেছে তা বুঝতে পারলেও কি এক অদ্ভুত কারনে ও আরো সামনে এগিয়ে যায়। কি হচ্ছিল ও বুঝতে পারছিল না, একটা ব্যাপার ছাড়া, মিতু ওর বুকের মাঝে একটু একটু করে অনুভব করতে পারছিল রিএক্ট্যারের গতি বাড়ছে। ও অবাক হলো, এমনটা শুধু মাত্র কোন অচল সাইবর্গের কাছ থেকেই এমন সংকেত পাওয়া যায়, বাঁচার শেষ আশ্রয় হিসেবে এটি সাধারনত উদ্ধারকারী সাইবর্গদের কাছে পাঠানো হয়।মিতু বুঝতে পারলো, কেন এই সংকেত আগে পাওয়া যায়নি, এটার রিএক্ট্যারের গতি কমে এসেছে তাই খুব শক্তিশালী কোন সংকেত পাঠাতে পারেনি। মিতু স্কীড করতে করতে পানির উপর দিয়ে ভেসে যেতে লাগলো। একটু দূরেই সে যা খুজঁছিল তা খুঁজে পেল। মিতু অবাক হলো, ওর প্লাডিয়াম সেল গুলো জমে যাচ্ছে। খুব সন্তপর্ণে মিতু পানির গভীরতা মেপে দেখলো, ত্রিশ ফুট গভীর পানির নিচে এক তৃতীয় প্রজন্মের সাইবর্গ।
৩য় পরিচ্ছেদঃ
লিফটিং চেয়ারের উপর জোড়সোড় মূর্তিটার দিকে এক পলক তাকিয়েই ড. ইফতি কপালের কৃত্তিম পেশীগুলো কুঁচকে ফেললো। এই মেয়েটার জীবন বৃতান্তই সে দেখছিলো। বি ক্যাটাগরির সাইবর্গদের নিয়ে এর আগেও সমস্যা হয়েছে, এই মেয়েও তাই করতে চলেছে। ড. ইফতি ভাবতে ভাবতে বুকের রিএ্যাক্টরে চাপ অনুভব করলেন, মাথার মাইক্রো চিপটি অযথাই গরম হয়ে গেল, কানের মাঝে ধোঁয়া বের হবে হবে করছে। কোনমতে নিজের বিরক্তি চেপে অবশেষে মেয়েটির দিকে তাকালেন, তার মাথায় এখন কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে যে গুলো না করলেই নয়।
- এম.আই.টি.ইউ-৮১, তুমি কি গ্রামে ফিরে যেতে চাও?
- জ্বী মহামান্য ডি.আই
- তুমি কি অস্বস্তিবোধ করছো?
- না, মহামান্য
মিতুর এখন খুব ইচ্ছে করছে এই হতচ্ছাড়াকে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখতে, নতুবা এমন কিছু করতে যেন এই বিরক্তিকর বাক্সটা হাং হয়ে যায়। উঁচু মর্গের উচ্চাংগ সংগীত গাইতে পারলে মনে হয় হয়ে যেত।
- তুমি যে সাইবর্গটি খুঁজে পেয়েছো সেটা সম্পর্কে কি তোমার কোন কৌতুহল জেগেছে
- না, মহামান্য, কৌতুহল বি ক্যাটাগরির সাইবর্গকে দেওয়া হয়না। তাই আমার কোন কৌতুহল নেই
- তুমি এই সাইবর্গ সম্পর্কে কি কি জানো?
- মহামান্য, এটি একটি তৃতীয় প্রজন্মের সাইবর্গ এবং পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বে এটি ছিল পৃথিবীর বুকে শেষ সাইবর্গ। আমি ইতিহাস ক্লাস থেকে জেনেছি।
- বেশ। তুমি এর আবিষ্কার সম্পর্কে কাউকে জানিয়েছো?
- না মহামান্য
মিতু কিছুদিন আগে ভয় নামক অনুভুতিটি বোঝার পর থেকে এই প্রথম অজানা এক ভয় পেল। তার পলিমার কোটেড ব্লাড কর্ড গুলোতে শিহরণ অনুভব করলো।
- এম.আই.টি.ইউ-৮১ তুমি আমার দেখা সেরা বি ক্যাটাগরির সাইবর্গ। এবার তুমি যেতে পারো, তোমাকে আমাদের ইউরেনিয়া কার তোমার বাড়িতে পৌঁছে দেবে।
- ধন্যবাদ মহামান্য ডি.আই
মিতু হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলো, ধীরে ধীরে সে উঠে দাড়ালো। নদীর দিকের ফাইবার গ্লাসগুলো সরে যেতে দেখলো সে। হঠাৎই একটি সুদৃশ্য T90 মডেলের একটি ইউরেনিয়া কার এসে হাজির। মিতু গাড়ীতে উঠতে গিয়ে কিছুটা দ্বিধানিত্ব, পরক্ষণেই সে পরিষ্কার বুঝতে পারলো সে কৌতুহল বোধ করছে। আরো অবাক হলো সে, কারন সে মহামান্য D.I কে মিথ্যা বলেছে। কিন্তু এর কারন সে খুঁজে পেল না আর এটি সে শিখলই বা কি করে!
তৃতীয় প্রজন্মের সাইবর্গকে তুলে আনার সময় তার রিএ্যাক্টর চার্জ করার কথা মিতুর মনে আসে। সে অবাক হয়, চার্জ করার সময় সাইবর্গটির কিছু স্মৃতি কিভাবে যেন তার অজান্তেই কপি হয়ে গিয়েছিল, মনে হচ্ছিল সাইবর্গটি পুরো সজাগ আর সেই এই কাজটা করেছে। সেই যেন নির্দেশ দিচ্ছে, মিতু পালাও, মিতু পালাও।
মিতু উড়ে চললো ওর গ্রামের পথে, এখনো তেইশ হাজার মাইল তাকে উড়ে যেতে হবে।
এদিকে ড. ইফতি ল্যাবে ফিরে এলেন, যা প্রশ্ন করতে চেয়েছিলেন তা আর করা হলো না। মেয়ে সাইবর্গটিকে চূড়ান্ত পরিমাণ গাধা মনে হলো তার। তিনি কাজে মন দিলেন। আবিষ্কার হওয়া সাইবর্গটিকে সচল করার সব আয়োজন শেষ, পূর্ণমাত্রায় চার্জ হলেই তার সাথে সে কথা বলতে পারবে। সে সব জানার জন্য তীব্র কৌতুহল বোধ করছে। তবে এখনি তার একটু স্মৃতি ক্যাপসুল থেকে ঘুরে আসতে হবে, দেখা যাক কিছু জমা হয়েছে কিনা।
৪র্থ পরিচ্ছেদঃ
প্রথমেই যে কথাটি মনে হলো, আমি কি একা। শূন্যতাবোধ কি এখনো আছে? নিজেকে অটোশাটডাউন মোডে দেবার পূর্বমূহুর্তে যে শূন্যতাবোধের অনুভুতি ছিল তা কি এখনো আছে!
রনীল বুঝতে পারছে না। বেশ অনেকক্ষণ চেষ্টা করে ব্যার্থ হলো। তার এই মুহুর্তে বাবা-মায়ের মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে। যদিও তারা ১৫০০ বছর আগেই হারিয়ে গেছেন। বাবা-মা চলে যাবার পর থেকেই সে এই শূন্যতা নামক বোধটি খুঁজে পায়। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করতে করতে নিজেকে সে যতই ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছে সে ততই ভেতরে ভেতরে শূন্যতাবোধ করেছে।
রনীল শেষদিন গুলোর কথা ভাবলো। আর নিজেকে খুব অসহায় ভাবলো।
রনীল ও তার দুই বিজ্ঞানীর মাধ্যমে পৃথিবী ও টিরে-৮৪৫ গ্রহের মাঝে একটা যোগসূত্র তৈরী হয়েছিলো। পৃথিবী পেল সবথেকে উন্নত প্রযুক্তি আর টিরে-৮৪৫ পেল অনভূতির স্বাদ। পৃথিবীর জীবনযাত্রার পরিবর্তন হলো যেন এক নিমেষেই। তবে অন্যদিকে টিরে বাসিন্দারা আবিষ্কার করলো নিজেদের মাঝে অন্যরকম কিছু পরিবর্তন। তারা শুধু অনুভূতি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকলো না, তারা চাইলো এই অনুভূতি শুধু তারাই ভোগ করবে, মানুষ নয়। তাই ষড়যন্ত্র হলো, টিরে-৮৪৫ গ্রহের হাইপার ফোর্স নেমে এলো পৃথিবীতে ধ্বংসের নেশায়। অনুভুতির স্বাদ নিতে গিয়ে সাইবর্গ জাতি পেয়েছে জেদ, ঘৃণা, হিংসা ও রাগের মত খারাপ অনুভুতি আর সেই রোষে এবার পুড়তে লাগলো পুরো পৃথিবী।
পৃথিবীর মানুষ মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেও যুদ্ধে জয়ী হতে পারছিলো না। রনীল তখন গবেষণা কেন্দ্রে, সে যুদ্ধ করতে পারে না। তবে সে কিছু একটা করতে চাইলো, তাই শেষ অস্ত্র হিসেবে একটি দূর্বোধ্য কোডেড প্রোগ্রাম বানালো সে। আর পাঠিয়ে দিল টিরে-৮৪৫ গ্রহে। বলা হলো এটি পৃথিবীর সর্বশেষ অনুভুতি। টিরে-৮৪৫ গ্রহে এমনিতেই আনন্দ কারন তা্রা পৃথিবী জয় করতে যাচ্ছে, কিন্তু তারা অবাক হলো সাথে অনেক উৎফুল্ল কারন যে জন্য এই যুদ্ধ এত কষ্ট সেটা তারা পেয়ে গেছে। পৃথিবীর সব অনুভুতি তারা পেয়ে গেছে।তবু তারা সিধান্ত নিল, মানুষ কে আর বাঁচিয়ে রাখার মানে হয় না। পৃথিবী হবে তাদের। তাই শেষ গবেষণাগারটি নিউক্লিয়ার রেডিয়েশনে ধ্বংস করে দেওয়া হলো।
রনীল তখন গবেষণাগারের সুদৃশ্য লেকের সামনে দাড়িয়ে। হাতের মাঝে প্রিয় পৃথিবীর কিছু ভিডিও স্কেল, যা অমূল্য। শেষবারের মত বাবা-মায়ের মুখটা স্মৃতির পাতায় দেখে নিল। তারপর নিজেকে অটোশাটডাউন কমান্ড দিল। ততক্ষনে গবেষণাগার ভেঙ্গে পড়েছে। রনীল জলের স্পর্শ পেল, ঠান্ডা হিম জল।
-----------
স্মৃতি ক্যাপসুল থেকে ড. ইফতি বের হলেন। তার চোখ তারার মত জ্বলছে। ড. ইফতি মহাখুশি। সে নাচুঁনে রোবটের মত দুলে দুলে লাফাচ্ছে। পাশে দাঁড়ানো বিজ্ঞানী রোবটগুলোর অভিব্যাক্তিহীন চোখগুলো দিয়ে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। ড. ইফতির ১২০০ বছরের গবেষণার ফল প্রায় হাতের মুঠোয়। যে কারণে পৃথিবী ধ্বংস করা হয়েছে তা আজ সফল হবে, রনীলের পাঠানো সে কোডেড বার্তা আজ সে জানতে পারবে। আর সে নতুন করে লিখবে সাইবর্গ ইতিহাস।
৫ম পরিচ্ছেদঃ
রনীলের সব চিন্তাই এতক্ষন ধরে স্মৃতি ক্যাপসুলে জমা হয়ে গেল সেটা ও বুঝতে পারলো। তবে কিনা কোন কিছু নিয়ে দুঃচিন্তা করলো না।ধাতব একটা হাসিমাখা মুখ রনীলের মুখের সামনে ঝুলে আছে। ড. ইফতি, তার ঠোঁট নড়ে উঠলো,
- স্বাগতম সাইবর্গ-২১৯৭, তোমার সব মাইক্রো চিপ এখন দারুন কাজ করছে। তোমার ভাইব্রার হার্ট বদলে নতুন যুগের লিকুইডাল রিএ্যাক্টর বসানো হয়েছে। তুমি এখন ইচ্ছেমত চলতে পারবে।
ড. ইফতি’র গোপন ক্রু হাসি রনীল দেখতে না পেলেও বুঝতে পেল। বুঝতে পারলো এই ড. তাকে গিনিপিগ হিসেবে দেখছে। তাকে মেরে ফেলতে দেরী করবে না কোডেড বার্তার গোপন রহস্যটুকু জানতে পারলে। রনীল মনে মনে নিজেকে তৈরী করে নিল। স্মৃতি ক্যাপসুলে যে ভাইরাসটি প্রেরন করেছে তা কি ঠিক ঠিক কাজ করবে? রনীল একটু চিন্তায় পড়ে গেল। আর ঐ মেয়েটি কি ঠিক সময়ে আসতে পারবে!
রনীল আস্তে করে মাথা উচুঁ করলো, তারপর ধীরে ধীরে দাড়ালো। এখনো তার আর মাত্র কিছু মুহুর্ত দরকার।
- ড. ইফতি তুমি মিথ্যা বলছো। আমাকে বাচাঁনোর চেষ্টা করেছো তুমি, কারণ আমার স্মৃতিটুকু দরকার। আর আমাকে বাচাঁবে কি, আমি তো বেচেঁই ছিলাম।তুমি স্মৃতিটুকু তো নিয়েছো, এবার জানতে চাও আমি কি পাঠিয়েছিলাম!
ড. ইফতি মাথা নাড়লো।
- হ্যা বলো জানতে চাই। বলো সেই বার্তায় কি ছিল?
জিজ্ঞেস করার ফাকেঁই সে গোপনে লুকানো এল্যার্ম বাজিয়ে দিল, সমস্ত কিছুর জন্য সে আগেই তৈরী হয়ে আছে। সে জানে খুব সহজ হবে না ঘায়েল করা, এই সাইবর্গ অতিবুদ্ধিমান।
- আগে বলো তো সে অনুভুতিটা কেমন ছিল? অতি চমৎকার তাই না!
- নিশ্চই, এই অনুভূতি পেয়ে সবাই খুব খুশি হলো। আর খুব সহজেই এর ব্যবহার যে কেউ করতে পেরেছে। কারো বুঝতে কোন অসুবিধাই হয়নি। এমনকি অনুভুতিটি লোড করে দেবার প্রয়োজনও হয়নি। এটি সাইবর্গরা একাই শিখে নিতে পারাছিলো। কিন্তু এরপর কেন সবাই নিজেদের মাঝে যুদ্ধে জড়িয়ে গেল তা আর জানা যায়নি।
- এই অনুভুতির নাম ছিল “মিথ্যা”। এটা ঠিক অনুভুতি নয়, তবে অনেকটা তার কাছাকাছি। কোন কিছু গোপন করে অন্য কিছু বলা। এই যেমন তুমি আমাকে মেরে ফেলতে চাও কিন্তু মুখে বলেছো বাচাঁতে চাও। কি সুন্দর করে সামনা সামনি তুমি এর যথার্থ প্রয়োগ দেখালে। এই যে তুমি অন্য বিজ্ঞানীর ক্লোণ করে নিজেকে বানিয়েছো, এই চুরিও শিখেছো কিন্তু কিছু স্বীকার করো না। আর এসব করে, এসব কারনেই তোমরা ধ্বংস হয়ে গেছো, মানব জাতি ধ্বংসের শাস্তি পেয়েছো।
ড. ইফতি হাসলো,
- সাইবর্গ-২১৯৭, তুমি আমার তুলনায় দেখছি অনেক বেশি জ্ঞান রাখো। তুমি যা বলেছো তা সঠিক। তবে এসবে আমার আর আগ্রহ নেই। এসব রেখে বলো পৃথিবীর যে কিছু মানুষ এখনো লুকিয়ে আছে, তা তুমি কোথায় গোপন রেখেছো। তারা কোথায়?
ড. তার হাতে একটা ইলেক্ট্রো লেজার গান তুলে নিলো, রনীলের বুক সোজাসুজি। তার চোখে মুখে ঘৃণার ভাব ফুটে উঠলো। তবে কেন জানি তার খুব কষ্ট হলো হাতটা তুলতে, সে অসাড় অনুভব করলো কিছুটা।
- তুমি বোকা ড. ইফতি। আমাকে মারতে তুমি পারবে না আর মানুষ কোথায় আছে তাও তুমি জানবে না।তার থেকে তুমি বরং ভাবো তুমি কি করে বাচঁবে। এখন কি নড়তে পারছো?
ড. ইফতি হাত, মাথা নড়াতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না, বরং টের পেল তার রিএ্যাক্টরের কিছু একটা ঘটছে, সে কিছু ধোঁয়া দেখতে পেল। ততক্ষনে সময় শেষ হয়ে এসেছে।
রনীল আরো কিছু কাজ দ্রুত গুছিয়ে নিল। কিছু নির্দেশ দিল লুকিয়ে থাকা মানুষদের কে আর কিছু ভাইরাস প্রোগ্রাম প্রেরণ করলো ড. ইফতির অনুগত বাহিনীকে যেমনটা তাকে দিয়েছিল, যেন ড.এর মত পরিনতি হয় সবার।নতুন করে জেগে ওঠার সময় এখন। ধ্বংসস্তুপ থেকে গড়তে হবে নতুন পৃথিবী ।
খুব হালকা একটা গুঞ্জন শুনতে পেল রনীল। সে অনুভব করলো তার বুকের মাঝে এক গাঢ় অনুভুতি। মিতু এসেছে।
ইউরেনিয়া কারের দরজা খুলতেই, রনীল দেখলো হুবহু তার মায়ের মত চেহারার এক নারী দাঁড়িয়ে।রনীল তার বাড়ানো হাত ধরে এগিয়ে গেল।